কুমিল্লার দেবীদ্বারে হাসপাতালে ঢুকে অক্সিজেন সিলিন্ডিার দিয়ে পিটিয়ে শাহনাজ বেগম মিম (৪৫ ) কে হত্যার অভিযোগ, অপর দিকে একই উপজেলার গুনাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়নের উজানীকান্দি গ্রামের মৃত.খালেক এর ছেলে মো. শামীম( ৪৫)কে শালীসি বৈঠকে চেয়ার দিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় ও পুলিশের সৃত্রে জানা যায় শাহনাজ বেগম মিম (৪৫ ) নামে এক আয়াকে ঘুমন্ত অবস্থায় খুন করার অভিযোগ উঠেছে অজ্ঞাত দূর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় হাসপাতালের পরিচালকসহ ৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার দিবাগত রাত অনুমান ৩টায় কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের দেবীদ্বার সদর এলাকার জেলা পরিষদ মার্কেট সংলগ্ন ‘মা-মনি’ প্রাইভেট হাসপাতালে।
নিহত শাহনাজ মিম (৪৫) দেবীদ্বার পৌর এলাকার ভূষণা গ্রামের মৃত: সেকান্দর আলীর মেয়ে। ঘটনার পর আহত মিমকে মাথা ও মুখমন্ডল থেতলানো ও রক্তাক্ত অবস্থায় দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়, পরে আশংকাজনক অবস্তায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর বেলা ২টায় সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
ওই ঘটনায় নিহতার চাচাতো ভাই জহিরুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে দেবীদ্বার থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেন। জহিরুল জানান, মিমের একজন সৎ ভাই থাকলেও সে তার মতো করেই চলেন। বাবা-মা, আপন ভাই-বোন কেউ নেই, সে চিরকুমারী। দেবীদ্বার ‘মা-মনি’ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর থেকে আয়া পদে এ হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন। হাসপাতালই তার ঠিকানা, হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারি, রোগিদের নিয়েই তার পরিবার। তার সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থগুলোও হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট কয়েকজন বিশস্ত লোকের নিকট আমানত আছে বলে জানান। এ ব্যাপারে তার চাচাতো ভাই আমিন আহমেদ বলেন, আমার চাচাতো বোন স্বজন বলতে আমরাই, তবে সে হাসপাতালেই থাকত, এটাকে সে নিজ বাড়ি মনে করেই থাকত। তার কোন শত্রু নাই, তাকে হত্যা করার কোন কারনও দেখছিনা। ডাকাতির উদ্দেশ্যে কিংবা ছিনতায়ের উদ্দেশ্যে তাকে এভাবে পিটিয়ে হত্যা করতে পারেনা। সন্দেহ হচ্ছে তার উপর্জিত অর্থ লুট বা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকান্ড ঘটাতে পারে। হত্যাকারী তৃতীয় তলা থেকে নিচতলা পর্যন্ত নামার সময় পায়ের রক্তের চিহ্ন রেখে গেছে। এতবড় একটি হাসপাতাল তেমন কোন নিরাপত্তা ছিলনা, এমনকি সিসি ক্যামেরাও ছিলনা। ঘটনার সময় নৈশপ্রহরী, নার্স, আয়াসহ ৪ জন স্টাফ ও ৮ জন রোগী ও রোগির সাথে লোকজনও ছিল। দেবীদ্বার পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ড কমিশনার মো. মজিবুর রহমান বলেন, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর, সঠিক তদন্ত করলে এ হত্যাকান্ডের রহস্য বেড়িয়ে আসবে।
এ ব্যপারে দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নয়ন মিয়া বলেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর। টাকা পয়সা লেন-দেন থেকে, নাকি চোর চুরি করতে এসে নাকি, কারোর পরিকল্পিতভাবে হয়েছে নাকি অন্য কোন ঘটনা জড়িত তা তদন্তের পূর্বে কিছুই বলা যাবেনা। ওই ঘটনায় মৃত্যুর আগে একটি অভিযোগ পেয়েছি। এখন হাসপাতালের কয়েকজনকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আমরা এ হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনে কাজ করছি।
অপর দিকে একই উপজেলার গুনাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড উজানীকান্দি গ্রামের খেলার মাঠের পূর্ব পাশের বাড়ির মৃত.খালেক এর ছেলে মো. শামীম( ৪৫)কে শালীসি বৈঠকে উপস্থিত থাকা উজানীজোড়া গ্রামের মোলেম খন্দকারের ছেলে আব্দুল আলিম খন্দকার চেয়ার দিয়ে আঘাত করলে শামীম গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।পরে চিকিৎসারত আবস্থায় শনিবার দুপুরে আহত শামীম( ৪৫) মারা যায়। সে মুদি দোকানের ব্যবসায়ী ছিলেন। নিহত শামীমের মা জুবেদা খাতুন বলেন চেয়ার দিয়ে পিটার আঘাতে তার ছেলে গুরুতর আহত হয়, এতে শামীমের মৃত্যু হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন গুনাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির স্থানীয় মেম্বার মো. হিরন মিয়া। স্থানীয় সৃত্রে জানা যায় শুক্রবার( ১২, এপ্রিল) রাত সাড়ে দশটায় নিহত শামীমের বাড়ির চাচাতো ভাই মৃত: রফিকুল ইসলামের স্ত্রী রিনা বেগম কে নিয়ে এলাকাবাসী শালিসি বৈঠক করে এ শালিসি বৈঠকে নিহত শামীম কথা বললে তার কথা কে কেন্দ্র করে আব্দুল আলিম খন্দকার নিহত শামীমকে চেয়ার দিয়ে আঘাত করলে সে গুরুতর আহত হয়,পরে সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এ বিষয়ে থানা অফিসার ইনচার্জ নয়ন মিয়া বলেন- শুক্রবার রাতে স্থানীয়রা ৯৯৯ নম্বরে কল দিলে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনা স্থলে ছুটে যায়। তবে শালিসি বৈঠকে যে ঘটনা ঘটেছে নিহত শামীমের পরিবার থেকে শনিবার রাত ৮ টায় এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত কোনো মামলা করা হয়নি। মামলা করা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।