এ আর আহমেদ হোসাইন: দেবীদ্বার,কুমিল্লা
১৭ বছর ধরে জঙ্গলে খুপড়িতে শিয়াল, সাপ, বিচ্ছুসহ জীবজন্তুর সাথে অর্ধাহার-অনাহারে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করার পর মুজিবুর রহমান (৬০) নামের এক বৃদ্ধকে কুমিল্লা জেলার প্রশাসকের নির্দেশে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসার সেবা। জানা যায় দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে জেলার দেবীদ্বার উপজেলার ১০নং গুনাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়ন’র মাশিকাড়া গ্রামের উত্তরপাড়া মৌলভী বাড়ির পাশে একটি জঙ্গলের খুপড়ির ঘরে বসবাস করে আছেন বৃদ্ধ মুজিবুর রহমান। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে খবর পেয়ে,ঘটনাস্থলে ছুটে যান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান। এ ঘটনাটি দেশজুড়ে একাদিক গণমাধ্যমে
প্রকাশ পেলে সোমবার দুপুরে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলমের নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা মুজিবুর রহমানকে স্বাভাবিক ভাবে সুস্থ জীবন ও সুস্থ মন নিয়ে বাঁচার ব্যবস্থায় চিকিৎসা দেওয়ার জন্য দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো.নাজমুল হাসান জানান-মুজিবুর রহমান বর্তমানে সুস্থ ও স্বাভাবিক আছে তবে কিছুটা শারীরিক দুর্বলতায় ভুগছেন, পরিপূর্ণ সুস্থতার জন্য সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা হাসপাতাল কতৃপক্ষ গ্রহন করবে। এদিকে সোমবার বিকালে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায় মুজিবুর রহমান পুরুষ ওয়ার্ডে শুয়ে আছেন,মুজিবের কাছে জানতে চাওয়া হলো জঙ্গলের খুপড়ির ঘর থেকে কিভাবে এখানে আসলেন। উত্তর মুজিব বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজ দুপুরে উপস্থিত হয়ে আমাকে নিয়ে আসেন। এখন কেমন আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন মানসিক চাপ কমেছে তবে শরীরটা দুর্বল। জঙ্গলের মাছি,মশা,সাপ, শিয়াল আপনার কি ছিলো, সে উত্তরে তিনি বলেন-কেউ আমাকে আক্রমণ করতে চাইলে জঙ্গলের পশুরাই আমাকে সহযোগিতা করেছে।
এর আগে গত রবিবার উপজেলা প্রশাসনের লোকজন আসার সংবাদে শুনে বেড়িয়ে আসেন খুপড়ি থেকে মুজিব। বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে কান্নাবিজড়িত কন্ঠে খুপড়িতে বসবাস করার জীবনের গল্প শোনালেন তিন। অশ্রুসিক্ত নয়নে শুনলেন সবাই। অর্থ-বিত্তে সাঝানো সংসার সৎ ভাইদের রোষানলে পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করায় তাকে জঙ্গলেই ঠাঁই নিতে হয়েছে। জঙ্গলের খুপড়িতে থাকায় বিয়েটাও করতে পারেননি তিনি।
মুজিবুর রহমান জানান,তার বাবা মরহুম লাল মিয়ার প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন তার মাকে,এ সংসারে মায়ের এক মাত্র সন্তান ছিলেন তিনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা জানান,জঙ্গলে মানবেতর জীবনযাপন করা মুজিবুর রহমানকে জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ওনার জন্য জেলা প্রশাসক স্যার টিনের বরাদ্দ দিয়েছেন। ওনি সুস্থ হয়ে উঠলেই ওনার পৈত্রিক জমিতে আবাসনের ব্যাবস্থা করে দেওয়া হবে।